গ্রীষ্মের কোন এক রাতে জঙ্গীপুর রোড স্টেশনে এই ছবিটি তুলেছিলাম। রাত তখন প্রায় ১১ টা হবে। কলকাতা যাওয়ার দিনের শেষ ট্রেন, ডাউন বালুরঘাট এক্সপ্রেস তখন সবুজ সিগন্যালের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্ল্যাটফর্মে লোকজন খুব একটা নেই। এর কিছুক্ষণ পরেই আসবে আপ কামরূপ এক্সপ্রেস। তবে সেটা অন্য প্ল্যাটফর্মে। সারাদিনের ব্যস্ততার পর রাতের বেলা স্টেশন গুলোর সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে যায়। অন্ধকার নামার সাথে সাথেই জ্বলে ওঠে বাতি স্তম্ভের আলো গুলো। আর একটু রাত বাড়লেই যখন স্টেশন মোটামুটি ফাঁকা হয়ে যায়, চায়ের দোকানের ভিড় যখন ক্রমশ পাতলা হয়ে আসে, তখন প্ল্যাটফর্ম জুড়ে তৈরি হয় আলো আঁধারির এক মায়াবী পরিবেশ। গল্পের সেই দৈত্যের চোখের মতো দূরে জ্বলতে থাকে সিগন্যাল পোষ্টের লাল আলো গুলো। মাঝে মধ্যে রাতের নিস্তব্ধতা কে তছনছ করে দিয়ে ছুটে চলে যায় মালগাড়ি। এখন বেশিরভাগ মালগাড়ি ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ দিয়ে চললেও কদাচিৎ দেখা মেলে ডিজেল চালিত লোকোমোটিভ গুলির। আর সেই সঙ্গে শুনতে পাওয়া যায় তার সেই গগনভেদী হর্নের আওয়াজ। পুরো নষ্টালজিক করে দিয়ে ছুটে...
more... বেরিয়ে যায় এক নিঃশ্বাসে। হালকা বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার পাতা গুলো দুলে ওঠে। বাতাসে ভেসে আসে কোন এক জংলি ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। রাত চড়া কোন এক পাখি অদ্ভুত আওয়াজ করে মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলে যায়। হাতে টর্চ নিয়ে প্ল্যাটফর্ম চত্ত্বরে পায়চারি করে বেড়ায় রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্সের কর্মীরা। এর মধ্যে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ১২ বেজে গেছে। দূরে কোথাও একটা শেয়াল ডেকে উঠল। আচমকা ঘোর কেটে গেল মাইকের শব্দে। স্টেশনে ঘোষণা হচ্ছে আর কিছুক্ষণ পরেই ২ নং প্ল্যাটফর্মে আসছে কলকাতা যাওয়ার দিনের প্রথম ট্রেন ডাউন হাটে বাজারে এক্সপ্রেস। হর্ন বাজিয়ে আগমনের বার্তা দিয়ে, নির্ধারিত সময়ের ২ মিনিট আগেই হাটে বাজারে এক্সপ্রেস এসে পৌঁছলো জঙ্গীপুর রোড স্টেশনে। ঘুমন্ত প্ল্যাটফর্ম যেন মূহূর্তের মধ্যে আবার জেগে উঠল। আমিও ব্যাগপত্র নিয়ে এগিয়ে গেলাম নির্দিষ্ট কামরার দিকে। এরপর ব্যাগপত্র যথাস্থানে রেখে আবার ফিরে এলাম দরজার সামনে। তখনও দেখি কিছু মানুষ তাঁদের নির্দিষ্ট কামরার সন্ধানে ছোটাছুটি করছেন। নির্দিষ্ট সময় পর দৈত্যের চোখ গুলো সবুজ হতেই হুইসেল বাজিয়ে দৌড়তে শুরু করল হাটে বাজারে এক্সপ্রেস। স্টেশনের গণ্ডি পেরিয়ে ছুটে চললো ট্রেন তিলোত্তমার উদ্দেশ্যে। স্টেশনের আলো গুলো তখন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে শুরু করেছে। একসময় তাও মিলিয়ে গেল। দরজার কাছ থেকে আমিও চললাম আমার জন্য নির্দিষ্ট করা আসনে। বিদায় জঙ্গীপুর। শীঘ্রই দেখা হবে!