বছরের প্রথমদিনের ভ্রমণ...
৩১.১২.২০২১ - বছরের শেষদিনে খুব ইচ্ছা হলো ঘুরতে যাওয়ার, নাহ! ইকোপার্ক কিংবা ভিক্টোরিয়া না, ভিড় এড়িয়ে চলতেই বেশি পছন্দ করি, আর এই করোনার সময়তো আরোই। মনে পড়লো গুসকরার কথা, এখানথেকে ভালকিমাচান, আউশগ্রামের কাজুগাছের জঙ্গল, দ্বারিয়াপুর এবং ওরগ্রাম যাওয়া যায়। ঠিক করলাম শেষের দুটো জায়গায় আপাতত যাবো। জানতাম না কিভাবে যাবো, সে পরেই দেখা যাবে, google mapsতো আছে। ঘুমাতে রাত ১২টা পার হয়ে গেলো, চারিদিকে বাজি ফাটছে।
...
more... ০১.০১.২০২২
ভোর ৫টায় বেরিয়ে পড়লাম ফাস্ট ট্রেন ধরে বর্ধমান। তারপর গণদেবতা এক্সপ্রেস ধরে গুসকরা নামলাম ৮:৩০এ। গুসকরা নেমে মানকর/দুর্গাপুর গামি বাসে চেপে পড়লাম... ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম দ্বারিয়াপুর... ডোকরা শিল্পকেন্দ্রিক গ্রাম। গ্রামটা অল্প ঘুরেই একটা গরুরগাড়ির পিছুপিছু চললাম গ্রামের পাশেই একটা জঙ্গলে। Syllabus এ Joint Forest Management পড়েছিলাম, নিজের চোখে দেখে নিলাম। খুব পরিষ্কার একটা জঙ্গল, গাছের ঘনত্ব খুবই কম, গ্রামের মেয়ে-বউরা জঙ্গল ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করছে, শুকনো ডাল-পাতা পরিষ্কার করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে উনুনে জাল দেবে বলে আর মাঝেসাঝে একটা গরুরগাড়ি। একটা জলের কলে মুখ-হাত ধুয়ে টিফিন সেরে নিলাম, তারপর জঙ্গলে ঘন্টাখানেক ঘুরেতে থলমাম... হেডফোন চলছে "গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ"... কিন্তু সীমিত সময়, আর এই জঙ্গলটা unplanned হওয়ায় বেশিক্ষণ থাকা হলো না। যথারীতি বাস স্ট্যান্ডে ফিরে গুসকরা স্ট্যান্ডে ফিরে পড়লাম।
১১টা নাগাদ গুসকরা বাসস্ট্যান্ড এসে সেখান থেকে বর্ধমান গামী
বাসে উঠে দাউড়াদাঙ্গা নামলাম। রাস্তা থেকে নামতেই দেখতে পেলাম গুসকরা বিমানবন্দরের পরিত্যক্ত রানওয়ে। রোদে সেইদিকে এগোলাম না, বরং একটা ছায়াযুক্ত রাস্তা ধরলাম রাখালের পিছুপিছু। অচেনা পড়ার মধ্যে দিয়ে আসতে আসতে একজায়গায় জলের কল পেলাম। সেখানেই দুপুরের লুচি-তরকারি খেয়ে নিয়ে আবার হাঁটা লাগলাম...চলে এলাম ওরগ্রাম জঙ্গল। এটা আসলেই একটা জঙ্গল...গাছের ঘনত্বটাও বেশি... নেটওয়ার্ক চলে যাচ্ছিল, google mapsও কাজ করছিলো না। স্থানীয়দের থেকে রাস্তা জানলাম... মূলত লালমাটির রাস্তা দিয়েই হেঁটে চলতে হবে... আমার প্যান্টের নিচের দিক ততক্ষনে লাল হয়ে গেছে ধুলোয়। এই জঙ্গলে এক ঘুরতে বেশ গা-ছমছম করছিল। লোকজন একেবারেই কম এবং রাস্তায় খুব ধুলো... হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গল ঘুরে ফরেস্ট অফিসের সামনে পৌঁছলাম। ঘড়িতে ২টো বাজে। ফাঁকা মাঠ দিয়ে হাঁটতে থাকলাম নোয়াদারঢাল স্টেশনের দিকে। এই স্টেশনটা কিন্তু খুবই পরিচিত আমার। খুব প্রিয়ও বটে... ঠিক ২ বছর আগে, ০১.০১.২০২০ ...সাইথিয়া-র টিকিট কেটে ট্রেনে চেপেছিলাম, ঠিক করিনি কোথায় নামবো ...এই স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই খুব পছন্দ হয়ে যায়... তারাহুরো করে নেমে পড়েছিলাম এখানে, একবেলা কাটিয়েছিলাম...অনেক স্মৃতি আছে। ২ বছর পর আজও সেই স্টেশন প্রায় একই রকম, তবে এবারের ভ্রমণে কিছুটা পরিবর্তন ছিল। ৩টে বাজে... রামপুরহাট-শিয়ালদহ লোকাল ঢুকলো, আমি উঠলাম না... পরের বর্ধমান গামী ট্রেনে উঠব। ট্রেন এলো ১ঘণ্টা লেট, পৌঁছলাম বর্ধমান। বিস্কুট কিনে খেয়ে, কিছুক্ষণ কাটিয়ে উঠলাম শহীদ এক্সপ্রেসে... ট্রেন অল্প লেট চলছে, রাতের অন্ধকারে ছুটে চলেছে ... আমার মনের মধ্যেও তোলপাড় করছে বেশকিছু স্মৃতি ও অনুভূতি...
#mymemories